শুক্রবার | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম

বানিয়াচংয়ের ঐতিহাসিক গড়ের খাল, পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।।

প্রকাশিত :

নিজস্ব প্রতিনিধি।। পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বাস। ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে বানিয়াচংয়ের গ্রামের অবস্থান। সমাজ বিজ্ঞানের একটি সংজ্ঞা আছে সেটা বানিয়াচংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়! যেখানে কয়েকটি পাড়া নিয়ে একটি মহল্লা, কয়েকটি মহল্লা নিয়ে একটি গ্রাম, কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন।

কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানের সেই সংজ্ঞা কে পাশকাটিয়ে বানিয়াচং একটি বিরল নজির সৃষ্টি করেছে।
বানিয়াচং ৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা। পৃথিবীতে এমন নজির কোথায়ও নেই।

এই বানিয়াচং ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি সমৃদ্ধ গ্রাম।
এই গ্রামে জন্মেছিলেন ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস, যিনি প্রথন বাংঙালী হিসাবে বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

এই গ্রামে আর জন্মেছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, মাস্টার দা সূর্য সেনের অন্যতন সহযোগী হেম সেন ও সুশীল সেন। তাদের বাড়ি এই গ্রামে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী সাঈদুল হাসান, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সাবেক মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী সহ অসংখ্য গুনী মানুষের জন্মস্থান এই বানিয়াচং গ্রামে।

আর গ্রামের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার নাম গড়ের খাল। প্রায় ৩২ কিলোমিটার আয়তনের এই খালটি বানিয়াচং গ্রাম কে বেষ্টনী দিয়ে রেখেছে।

রাজা হাবীব খাঁ’র আমলে বর্হিশত্রুর হাত থেকে বানিয়াচং কে বাঁচাতে পরিখা খাল খনন করা হয়।
এই গড়ের খাল বানিয়াচংয়ের একটি ঐতিহ্য বহন করে।

এই খাল বানিয়াচং কে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। এই খালে সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস।

এক সময় গড়ের খাল দিয়ে বানিয়াচংয়ের চারদিকে নৌকা যোগে ভ্রমণ করা যেত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় গড়ের খাল দিন দিন দখল হয়ে মানুষ এটা কে গ্রাস করতে শুরু করে। বেদখল হয়ে পড়ে গড়ের খাল। সারা বছর শুকিয়ে থাকে গড়ের খাল।

অকল্পিত উন্নয়নের কারনে খাল ভরাট করে যেখানে সেখানে ব্রীজ কালবার্ট ও রাস্তা বানিয়ে খালের জল নিষ্কাসনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল। এতে বানিয়াচংয়ের সদরে পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছিল।

যে যেভাবে পারে খাল দখলের উৎসবে মেতে উঠেছিল অনেকেই ।

দখলের কারনে একদিকে যেমন গড়ের খালে ঐতিহ্য হারাতে বসেছিল অন্যদিকে বানিয়াচংয়ে জলাবদ্ধতা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক।

সামান্য বৃষ্টিতে প্রায় জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হত। এতে নানান ভোগান্তির শিকার হতেন এলাকাবাসী।

এই খাল দিয়ে বানিয়াচংয়ের চারদিকে নৌকা যোগে যাতায়াতের যেমন সুবিধা ছিল তেমনি ছিল পানি সেচের ব্যবস্থা। এই গড়ের খাল দিয়ে হাজার মনের ধান বোঝাই নৌকা অনায়াসে চলাচল করতে পারত। বর্ষাকালে গড়ের খাল ছিল একমাত্র রাস্তা, যেটা দিয়ে অনায়াসে চলাচল করতে পারত ছোট বড় নৌকা। গড়ের খাল দিয়ে নতুন বউ নাইওর করত পানসী নৌকা চড়ে।

কালের বিবর্তনে ঐতিহ্য হারিয়ে বসে ছিল এই ঐতিহাসিক গড়ের খাল।

সম্প্রতি প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ঐতিহাসিক গড়ের খালের খনন কাজ শুরু করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে সূত্রে জানাগেছে।

গড়ের খালের এই প্রকল্পে খনন কাজ শেষে সৌন্দর্য বর্ধনে খালের দুপাশে গাছ লাগিয়ে দৃষ্টি নন্দন করা হবেও বলে জানা যায়।

এই খাল খননের ফলে বানিয়াচংয়ের সেচের পানি অভাব হবে না যেমন অন্যদিকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে জনগণ।

গড়ের খাল যেনন বানিয়াচংয়ের ইতিহাসের অংশ তেমনি এটা কে পরিকল্পিত ভাবে পর্যটনের বিকাশে কাজে লাগিয়ে দৃষ্টি নন্দন করা যেতে পারে। নৌকা যোগে ভ্রমণ পিপাসুদের বানিয়াচং গ্রামটি কে দেখার সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে।

এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় রাতদিনে এক্সরে ভেটোর মেশিন দিয়ে খনন কাজের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে।
খনন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানাযায়, খুবই দ্রুততার সহিত তাদের কাজ এগিয়ে চলছে, শীঘ্রই খনন কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর তারা সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে হাত দিবেন।

ঐতিহাসিক গড়ের খাল নিয়ে এলাকার জনগণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। খাল খনন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা সমাজে চলমান।কেও বলছে কোথাও খাল প্রস্থে বড় ও গভীর আবার কোথাও সরু হয়ে অবস্থায় খনন কাজ হয়েছে। তাদের দাবী ঐতিহাসিক গড়ের খালের কাজে যেন কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি না হয়।

কারন হিসাবে তারা বলেন, জনগণের টাকায় এটা খনন হচ্ছে তাই এই কাজের সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়া তাদের দাবী।

পক্ষে বিপক্ষে কথা থাকলেও বানিয়াচং বাসী দীর্ঘদিনের দাবীর ছিল গড়ের খাল খনন হউক। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গড়ের খাল খনন করা হচ্ছে।

পাশাপাশি সংযোগ খাল গুলো খনন করা হবে শুনে মানুষ জন খুবই খুশী। এই খাল খননের ফলে সারা বছর পানির বড় একটি উৎস হবে গড়ের খাল।
সেচ মৌসুমে চাষাবাদের কোন প্রকার পানি জলের অভাব হবে না বলে বলো কৃষকরা আশাবাদী।
গড়ের খাল খননের ফলে ঐতিহ্য ফিরে পাবে বানিয়াচং বাসী।

পাশাপাশি পর্যটনের দাড়ও খুলবে কর্মসংস্থান হবে অনেক লোকের। বেকারত্ব ঘুচবে এলাকার বেকার মানুষের।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও সমাজকর্মী।
আবদুল হক মামুন।

আজকের সর্বশেষ সব খবর