আবদুল হক মামুন বানিয়াচং।। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব, দিনদিন বাড়ছে এর ব্যবহার, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি। অবাধে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েই চলায় পরিবেশ হুমকির মুখে।
সরকার প্যাকেটজাত পণ্য ছাড়া অন্য কোন কাজে পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও থেমে নেই পলিথিনের ব্যবহার। মানুষের সচেতনতা অভাব এবং যথাযথ আইন প্রয়োগ না হওয়ায় পলিথিনের বিক্রি রোধ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকার এই পলিথিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও বানিয়াচংয়ের বিভিন্ন হাটবাজারে অবাধে চলেছে পলিথিনের ব্যবহার। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় এসব পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারনা। পলিথিনের অবাধ ব্যবহার রোধ না করতে পারলে সামনের দিনগুলোতে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশংকা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোর নেতারা।
বানিয়াচং বাজার গুলোতে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে কিছু জরিমানা এবং সর্তক করার পরও থেমে নেই পলিথিনের ব্যবহার। হাটবাজারে পলিথিনের ব্যবহারে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দুষণ সহ মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে।
এসব পলিথিন পচনহীন হওয়ার মাটিতে শাকসবজি ও ফসল উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে গেছে, দিনদিন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং মাটির উর্বরতা হারাচ্ছে।
সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করার পর প্রথম দিকে দোকানীরা লুকিয়ে পলিথিন ব্যবহার করত কিন্তু বর্তমানে এসব পলিথিন অবাধে বিক্রি ও ব্যবহার দুটোই বেড়েই চলছে।
একসময় বাজারে হালকা মানের পলিথিন দেখা যেত, কিন্তু এখন প্রতিটি দোকানে ভারী মানের পলিথিন ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে। এসব নিষিদ্ধ পলিথিন দীর্ঘদিনেও নষ্ট হয় না। তাই এসব পলিথিনের কারনে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিদিন।
গ্রামের হাটবাজারে অবাধে পলিথিন বিক্রির ফলে রাস্তায় আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন।
উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জনগণ সচেতন হয়ে ভাবে পলিথিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
পলিথিন ব্যবহার কুফল সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারে সভা সমাবেশ করে মানুষ কে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝাতে হবে।
মানুষ কে পলিথিনের বিকল্প জিনিসের ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। বিকল্প পরিবেশ বান্ধব বাজারের ব্যাগ ব্যবহারে ব্যাপারে উৎসাহী করতে হবে। তাতেই পলিথিনের ব্যবহার রোধ সম্ভব হবে।
আর যারা আইন অমান্য করবে তাদের কে জরিমানার আওতায় আনতে হবে।
বাজারে পলিথিনের বিকল্প পরিবেশ বান্ধব ব্যাগের যোগানও বাড়াতে হবে। পাট জাতের ব্যাগ বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের কে আদেশ ও নির্দেশ প্রদান করতে হবে। যদি ব্যবসায়ীরা পলিথিন বিক্রি বন্ধ করে দেয় তা হলে মানুষ বাধ্য হয়ে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ কিনবে।
একটা সময় গ্রামের মানুষজন বাজারে যেত খলই (এটা বাঁশ থেকে তৈরী এক প্রকার বাজার সদাই আনার পাত্র)। এটা ছিল পরিবেশ বান্ধব বাজার বহন করার পাত্র।
হাটবাজারে প্রতিটি মানুষের কাছে পরিবেশ বান্ধব এই পাত্রটি দেখা যেত। পাশাপাশি পাট জাতের ব্যাগ ব্যবহার করত গ্রামের লোকজন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এসব জিনিস। মানুষ আধুনিক সভ্যতার পাশাপাশি অলস প্রকৃতি হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন হাটবাজার সরেজমিন ঘুরে কোথাও পরিবেশ বান্ধব পাটের ব্যাগ চোখে পড়েনি।
চারদিকে শুধু নিষিদ্ধ পলিথিনের সয়লাব চোখে পড়ে।
যদি বাজার হাটে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ না হয় তা হলে দিনদিন পরিবেশ নষ্ট হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনিতেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনদিন আবহাওয়া বৈরী আচরণ করছে।
মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। দিনদিন তাপমাত্রা বেড়েই চলছে, অসময়ে ঝড়বৃষ্টি সহ নানাবিধ ভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ছে।
তাই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে সচেতন মহলের দাবী।
বাজার করতে আসা একজন ক্রেতা কে প্রশ্ন করা হল আপনি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করছেন কেন? ক্রেতা উত্তরে বলেন,পলিথিন সহজলভ্য তাই ব্যবহার করছি, তবে তিনি স্বীকার করেন নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার না করাই ভাল।
একজন সবজি ব্যবসায়ী কে প্রশ্ন করা হলে, নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা তো ক্রেতাসাধারণ কে বলি ব্যাগ সাথে নিয়ে আসতে, কিন্তু কিছু ক্রেতা পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ সাথে আনলেও অধিকাংশ ক্রেতা পলিথিন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছেন। তাই আমরা বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।
সমাজকর্মী ও সাংবাদিক আতাউর রহমান বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের বাজার তদারকি সহ জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা হলেই পলিথিনের ব্যবহার রোধ সম্ভব।
বানিয়াচং প্রেসক্লাব সভাপতি মোসাহেদ মিয়া বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
এই কারণে সরকারিভাবে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর জন্য আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। আইনের প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।
নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধের সরকারি কি উদ্যোগ নেয়া হবে জানতে চাইলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সবে মাত্র বানিয়াচং উপজেলায় যোগদান করেছি,আমি দ্রুত বাজার তদারকি করে নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার রোধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিব।